হোম > রাজনীতি

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ

আমার শহর ডেস্ক

আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৫৩

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হতে যাচ্ছে। এ জন্য সব প্রস্তুতি, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তুতিগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রাত আটটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই বৈঠকের আলোচনা ও নির্দেশনার বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপুপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। এর অর্থ হলো নির্বাচনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দরকার, সেটি প্রস্তুত করতে যা কিছু প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে।

গত জুনে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের পবিত্র রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।

এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার কথা জানাল সরকার। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বৈঠকটি মূলত আইনশৃঙ্খলা বিষয় নিয়ে হলেও তাতে নির্বাচনুসংক্রান্ত নানা প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ১৭ হাজার নতুন নিয়োগ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক যত প্রস্তুতি, তা ডিসেম্বরের মধ্যে নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে আগামী মাসগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখের মতো সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়, সে বিষয়ে এই আট লাখ সদস্যকেই যেন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কাজ করতে হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে।

প্রেস সচিব বলেন, এবার অনেকেই প্রথমবার ভোট দেবেন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছিল। বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোট দিতে পারেননি। কীভাবে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের পৃথক ভোটার তালিকা করা যায়, সেটি খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের জন্য যাতে আলাদা ভোটিং বুথ রাখা যায়, সেটিও তিনি দেখতে বলেছেন।

সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে

বর্তমানে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত সেনাবাহিনী এ ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবে কি না, অথবা নির্বাচনে তাদের ভূমিকা কী থাকবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনের দিন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।

এখন কোথাও কোথাও পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের সময় তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, এ জন্যই প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিবিড় প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন, যেন ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের দিন এক থানার পুলিশকে আরেক থানায় দেওয়ার যে প্রস্তাব, সেটি প্রধান উপদেষ্টা বিবেচনা করতে বলেছেন।

‘মবের’ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন যথেষ্ট সক্রিয়। যারা অপরাধগুলো করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার কথা বলছেন।

১৬ হাজার কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, থাকবে সিসি ক্যামেরা

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে মোতায়েন হবে, এটি একটা ইস্যু। সীমান্ত এলাকায় ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে মোতায়েন হবে, কতজন আনসার, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবেন, সেনাবাহিনী বা বিজিবি কীভাবে থাকবে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবে, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আট লাখের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার হচ্ছেন আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার হচ্ছে পুলিশের সদস্য।

প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে, ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা যায়, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে পুলিশ সদস্যের বডি ক্যামেরা রাখা এবং প্রতিটি কেন্দ্র যাতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আসে, সেটির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিসি ক্যামেরাগুলো যাতে মনিটরিং ঠিকমতো করা যায়, সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ডিসি-এসপি রদবদল লটারির মাধ্যমে

নির্বাচনের সময় জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন হয়। প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে বলা হয়েছে, অনেক সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাঁদের কীভাবে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়েও নির্দেশনা এসেছে।

এ ছাড়া আগে নির্বাচনের সময় চার দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হতো। এবার বলা হচ্ছে এটাকে কীভাবে সাত দিনের জন্য মোতায়েন করা যায়।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) রদবদল করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপুপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, কর্মকর্তাদের পরিচিতি নম্বর ধরে লটারির মাধ্যমে এই নিয়োগ করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে এসব নিয়োগ নিয়ে কেউ প্রভাব খাটাতে না পারেন।

আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, বিগত সরকারের আমলে একটি উপনির্বাচনে দেখা গেছে নির্বাচন কমিশন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে পুরো একটি আসনের নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরে আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। তারা এখন শুধু নির্দিষ্ট কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না, ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারে কি না, সে বিষয়েও আইনি দিক খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

অনেক নতুন ভোটার কীভাবে ভোট দেবেন, সে জন্য ভোটারদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

তিন নির্বাচনের ভোট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব না দেওয়া

উপ-প্রেস সচিব বলেন, গত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সব সম্ভব না হলেও যত বেশি সম্ভব তাঁদের বাদ দিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। যাতে অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া এক থানার পুলিশকে অন্য থানার দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

উপ-প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনার আলোকে সরকারি দপ্তরগুলো সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।

‘দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন’

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগে যে ধরনের নির্বাচন হয়েছিল, সেটা লোকদেখানো নির্বাচন। সে জন্য একটি প্রকৃত নির্বাচন কী করে আয়োজন করতে হয়, সেটির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কার কী ভূমিকা, সেটি পরিষ্কার থাকতে হবে। দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন করতে হবে, যাতে করে অনুশীলন হয়।

প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে বলেছেন, যাতে ভোটাররা প্রশিক্ষিত হতে পারেন। টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিগুলো প্রচার করতে হবে। জরুরি নম্বর সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘অর্ধেক ভোটার নারী, কেউ যেন ভোটের অধিকার থেকে তাঁদের বঞ্চিত করতে না পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত নারী কর্মকর্তা মোতায়েন থাকতে হবে।’

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ১৬ বছর মানুষ ভোট দেখেনি। ভোটারদের স্মৃতিতে আছে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোট চুরি। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, প্রথমবার ভোট যাঁরা দেবেন, এটা তাঁদের জন্য গৌরবের, তাঁরা যেন ভালো অনুভব করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভোটের সময় ইন্টারনেট যাতে সচল থাকে এবং প্রকৃত গণমাধ্যম যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, এ জন্য আগে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের পর্যবেক্ষকের নামে যাতে কেউ দলীয় কর্মীকে নির্বাচনী কেন্দ্রে পাঠাতে না পারেন, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।

নিবন্ধন পেতে আবেদন করা সব দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে ‘উত্তীর্ণ’ হতে পারেনি

শাপলা প্রতীক কেউ পাচ্ছে না: বিবিসি বাংলাকে সিইসি

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রশ্নে ইসির অবস্থান

কমিউনিস্টরা জনগনের কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে - সিপিবি কেন্দ্রীয় সম্পাদক লুনা নূর

সেকশন