হোম > মতামত

লাইফ ইজ নট অ্যা ব্যাড অফ রোজেস!

ফারহানা ইসলাম

আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮: ২০

জীবন পুষ্পশয্যা নয় এই প্রবাদ বাক্য পরীক্ষার খাতায় না লিখে আমাদের দেশে কেউ পরীক্ষায় পাস করতে পারে না। জীবন পুষ্পশয্যা নয়,তবে কি কণ্টকশয্যা? জীবন জীবনের মত । কখনো সরল কখনো গরল অমৃত আর বিষ। সৃষ্টিকর্তার এক আশ্চর্য উপহার এই জীবন। মহাকালের সময়ের হিসেবে আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই অল্প। এই স্বল্প সময়ের জীবনকে ঘিরে আমাদের কতইনা আয়োজন। অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, দাবিও নেই। কারণ তা অবাস্তব, অকল্পনীয়। কত নদীর পাড় ভাঙলো, জাগলো কত নতুন চর। প্রাণের স্পন্দন স্পন্দিত মুখর কাল মহাকাল ধরে। জীবন সুন্দর জীবন কুৎসিত ও বটে। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। কত সমস্যায় জর্জরিত হই মুহূর্তে মুহূর্তে। রোগ-ব্যাধি জরা ক্লান্তি আক্রান্ত করে শরীর ও মনকে । তবু কেউ জীবন হারাতে চায় না। কথায় বলে প্রাণের মায়া বড় মায়া। একদিন সব ছেড়ে চলে যেতে হবে এর চেয়ে বড় কোন ধ্রুব সত্য কি কিছু আছে? তবুও কত মায়ায় জড়াই আমরা, নিজের নীড়কে কত ভাবে সাজাই। শত মায়া দিয়ে মোড়ানো এক একটা সংসার। ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে সংসারকে যেমন রঙ্গীন করে তোলা যায়। জীবন কি এত সহজে রঙিন করা যায় ? না, সব সময় তা সম্ভব নয়। অদৃষ্ট সবসময় সবকিছুকে সমর্থন করে না। একটা প্রায় মীমাংসিত বিষয় মুহূর্তের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে। দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ মতবিরোধ জীবনে আছে থাকবেই।

কিছু কিছু জেদ আছে যা মানুষকে উজ্জীবিত করে। কিছু কিছু জেদ মানুষকে অতলে তলিয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন জীবনকে কাঁদিয়ে ভাসিয়ে দেয়ার চেয়ে হেসে উড়িয়ে দেয়া ই উত্তম। সত্যিই কি সব সময় হেসে উড়িয়ে দেয়া যায়? যদি হেসেই জীবনটাকে উড়িয়ে দেয়া যেত, সব সমস্যাগুলো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যেত কতই না ভালো হতো। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব নয়। একেকজনের মনস্তত্ত্ব একেক কাঠামোয় তৈরি। যারা হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন তারা নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু যারা পারেন না তাদের অবজ্ঞা করার কিছু নেই। মনের জোর সবার সমান নয়। এজন্যই এত মনোচিকিৎসক মোটিভেশনাল স্পিচ এবং এত কাউন্সিলিং। জীবনের পরতে পরতে যারা আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে পারেন তাদের সাহচর্য অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। যারা বিষন্ন বিষাদগ্রস্থ কথায় কথায় তাদেরকে অনেকেই হেয় করি। কিন্তু তা তার মনস্তত্বকে কতখানি নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা আমরা ভেবে দেখার প্রয়োজনবোধ করি না। সবার মনস্তত্ত্ব এক রকম নয়, হওয়া সম্ভব নয়। সৃষ্টিকর্তা বৈচিত্র দিয়ে পৃথিবীকে সাজিয়েছেন। প্রতিটি মানুষ তার শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে অন্য মানুষ থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র। এজন্যই তার সৃষ্টি এত মহিমাময়।

কারোর জীবনে সুখ দুঃখ কোনটাই চিরস্থায়ী নয়। হাসির পরে কান্না আসে কান্নার পরে সুখ। তবে কারো কারো জীবনে দুঃখ স্থায়ী হয়েছে সুখের চেয়ে বেশি। আবার এমন ও অনেকেই আছে যাদের জীবনে সুখ স্থায়ী হয়েছে বেশি ।সুখ দুঃখের ও রয়েছে নানা রকমফের। কেউ কেউ হাসির আড়ালে গোপন করেন গভীর কোন দুঃখবোধ। কেউ কেউ অল্প দুখে কাতর হয়ে কেঁদেকেটে বুক ভাসান নিমিষেই। কেউ কেউ অল্প সুখে অধিক সুখী হন। আবার কেউ কেউ অধিক সুখে নির্লিপ্ত থাকেন হামেশাই। প্রতিটি আলাদা আলাদা ব্যক্তি ধারন করেন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। তাই ব্যক্তিত্বের গড়ন অনুযায়ী তার জীবন- যাপন পদ্ধতি ও ভিন্ন ভিন্ন । জন্মগতভাবে অধিক মেধাবী হলে অল্প পরিশ্রমে কেউ সফল হতে পারে। আবার অধিক পরিশ্রম করেও কেউ কেউ ছুঁতে পারেন না কাঙ্খিত লক্ষ্য। কিন্তু তাই বলে তার শ্রমকে বৃথা ভাবা ঠিক নয়। তার মনে হতেই পারে সফল ব্যক্তির জীবন পুষ্পশয্যা। আর তার জীবন কণ্টকশয্যা। আমাদের সমাজে সফল ব্যক্তিকে মাথায় তুলে রাখা হয়। কিন্তু অসফলদের পরিশ্রমের মূল্য দিতে সমাজ একেবারেই নারাজ। কিন্তু তাকে যদি বুঝিয়ে দেয়া যেত সে ব্যর্থ নয়, তাহলে কণ্টকশয্যার যন্ত্রণা থেকে সে কিছুটা মুক্তি লাভ করত। এই কণ্টকশয্যার চিন্তায় সে এত ব্যতিব্যস্ত থাকে যে মাঝেমধ্যে আত্মহনের মত ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করেনা। অন্যের সাফল্য সুখ দেখে আমরা হতাশ হই। নিজের সাথে তুলনা করি। অন্যের জীবনকে সর্বদাই পুষ্পশয্যা মনে হয়। জীবনে যখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার সাথে মানিয়ে চলাই শ্রেয়। কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য এবং মনোবল ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই। যারা অল্পতেই ভেঙ্গে পড়েন বিপদ যেন তাদের পিছু ছাড়ে না। জীবন যখন যেমন তেমনভাবেই মোকাবেলা করা উচিত। যদিও সব সময় তা সম্ভব হয় না।

জীবন পুষ্পশয্যা বা কণ্টকশয্যা যাইহোক না কেন বিধাতার অপরূপ দান এই জীবন।জীবনের সাফল্যকে যতটা উপভোগ করি ব্যর্থতা গুলোকে ও যেন ততটা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করি। হতাশ না হয়ে ভেঙ্গে না পড়ে জীবনকে যাপন করি নিজের মতো করে। কঠিন পরিস্থিতিতে শক্ত হাতে হাল ধরতে শিখি। জীবন জীবনের মতো পুষ্পশয্যা ও নয় কণ্টকশয্যা ও নয়।তবে শ্রম ও চেষ্টা দ্বারা কণ্টকশয্যাকে পুষ্পশয্যায় রূপান্তর করা যায় না হয়তো তবে কাটাঁর ঘাত প্রতিঘাত কিছুটা সহনীয় ত করা যায় ই।মানব জনম সার্থক হয় তার শ্রম মেধা ও কর্ম দ্বারা। ছোট্ট জীবনের চাওয়া-পাওয়ার যেন কোন শেষ ই নেই। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হচ্ছে অন্যের সাথে নিজের প্রাপ্তির তুলনা করা। নাম যশ খ্যাতি ক্যারিয়ার এর পিছনে অন্ধের মত ছুটছি আমরা। কারণ একটাই অন্যের সাথে তুলনায় হেরে না যাওয়া। অমুক তমুকের সাথে তুলনার মাপকাঠিতে সব সময় পাল্লায় ভারী হয়ে থাকা। এ আদর্শমান থেকে বিচ্যুত হলে আমরা হেরে যাই। যতই সুখে থাকতে চাই পরিবার সমাজ সর্বদা মনে করিয়ে দিবে এই শয্যা পুষ্পশয্যা তো নয়ই এ যেন কণ্টকশয্যা। অসুস্থ প্রতিযোগিতা অনেক সময় অমানবিকতায় রূপান্তরিত হয়। কেড়ে নেয় সুখ আরাম স্বাচ্ছন্দ। সরলতা কুটিলতা পঙ্কিলতা অসুস্থ মানসিকতার জন্ম দিয়ে প্রতিমুহূর্তে শিশুদের মানসিক সত্ত্বাকে বিকারগ্রস্ত করে তুলছি আমরা।

সামাজিক প্রতিষ্ঠা ,শব্দটা যার আদৌ কোন আদি অন্ত নেই। এই শব্দটার জেরে দেশের সীমানা পেরিয়ে আদি অন্তহীন বিশ্বের পথে প্রান্তরে ধুঁকছে আমাদের সন্তানেরা। কণ্টকহীন শয্যার আশায়। আদৌ কি মিলবে কোথাও পুষ্পশয্যা? সুখ থাকে মনের গহীন কোণে। গভীর সংগোপনে সুখানুভূতি থাকলে বৃক্ষ তলে শয্যা পাতলে ও পুষ্পশয্যার অনুভূতি পাওয়া যায়। মনের গভীর অনুভূতির উপলব্ধি তৈরি না হলে অমূল্য রতন দিয়ে সাজালেও সে শয্যা কণ্টকাকীর্ণই থাকবে। নিজের মনের সুখ অধিকাংশ সময়েই পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভর করে। যদি পারিপার্শ্বিক অবস্থায় কর্ণপাত না করে নিজের মনের সুখকে নিজে প্রাধান্য দিতে পারতাম আমরা তবে বোধকরি কোন শয্যা ই কণ্টকাকীর্ণ হতো না। সব শয্যা ই হতো পুষ্পশয্যা। সেই আপ্ত বাক্যটা ও পরীক্ষার খাতায় অবধারিত ভাবে লিখতে হতো না লাইফ ইজ নট অ্যা ব্যাড অফ রোজেস।

ফারহানা ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট।

জুলাই ডায়েরি

জিপিএ ফাইভ এবং প্রজন্মের গন্তব্য!

কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে

সেকশন