হোম > মতামত

জুলাই ডায়েরি

আবুল হাসানাত বাবুল

আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩১

আবার ফিরে এসেছে ভয়-আতঙ্কের মাস জুলাই। স্মরণ করছি গতবছরের জুলাই মাসের স্মৃতি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ষোলশত। আহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চিকিৎসাধীন যারা তাদের থেকে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি। এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।

বড় কষ্ট হচ্ছে। দুঃখের বিষয় যেভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে চাই তা প্রকাশও করতে পারছি না। ষোলশতপ্রাণ কি আর ফিরে আসবে? আমরা অতি সাধারণ মানুষ। রাজনীতির কোন কিছুই বুঝিনা কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোমল মনোভাব আমাদের সরকারি নীতিনির্ধারকরা বুঝতে কেন দেরী করলো তা বুঝতে আমরা অক্ষম।

সংবাদপত্রে দেখলাম ২ জুলাই ঢাকার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এক ঘন্টা অবরোধ দিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ। ৩ জুলাই শাহবাগ মোড়ে দেড় ঘন্টা অবরোধ। আরো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের রাজপথে নেমে আসা। তার মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও রাজপথে নেমে এলো। ৫ জুলাই বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ। ৬ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি। ৭ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে স্থবির রাজধানী। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন, পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা। ৮ জুলাই ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ, রেলপথ, মহাসড়ক অবরোধ। ৯ জুলাই সারাদেশে বাংলা ব্লকেড নামে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ। ১১ জুলাই পুলিশের বাঁধার মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ। ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান। মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ। ১৬ জুলাই নিহত ৬ জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা। ১৭ জুলাই বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ। ১৮ জুলাই সংঘর্ষ ও গুলি। নিহত ২৭ জন। ১৯-২০ জুলাই ভয়ানক দুর্যোগ। সংঘর্ষ, লাঠি, রড দিয়ে মারধর। গুলি আর গুলি। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদের বুক পেতে দিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হবার ঘটনা সারাদেশের সব মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। সেদিন ছিল ১৬ জুলাই।

এরমধ্যে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট রায় ঘোষণা করলো। মেধা ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ৫ শতাংশ, আর ১ শতাংশ করে প্রতিবন্ধী, উপজাতি, তৃতীয় লিঙ্গ। ততদিনে ২১১ জন নিহত। আহত শতশত। ঢাকার উত্তরার হাসপাতালগুলো আহত দ্বারা ভরে গেছে। সরকারের দায়িত্বে থেকে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন হাস্যরস করে বলেন, ছাত্র আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট, তারপরে দৃশ্যই পাল্টে গেল। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি রণক্ষেত্র তৈরী করলো। একদিকে গুলি। অন্যদিকে অসহায় কোমলমতি ছাত্র। নিহত হলো পথচারী। ড্রাইভার, রাজমিস্ত্রী, হোটেল কর্মচারী, ছাদে পিতার কোলে বসা শিশু। গুলি কোথায় করছে, কাকে করছে গুলি, যারা ছুড়লো তারা বোধ হয় বুঝতেই পারছিল না। শতশত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শান্তির আহ্বান জানালেন। ততদিনে তিন সপ্তাহ চলে গেছে। যারা সরকারের নীতিনির্ধারক, যারা ঢাকার বিভিন্ন সংসদীয় আসনের এমপি, যারা সরকারি দলের নেতা-কর্মী সবাই গণহত্যায় শামিল। সীমান্তরক্ষায় যে বিজিবি থাকে, যে আনসার বাহিনী প্রহরায় থাকেন তারাও রাজপথে নেমে গেল ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার জন্য। এমন হত্যাকান্ড, সম্পদের ধ্বংস মেনে নেয়া যায় না। বড় ভয়ে ভয়ে গেছে জুলাই। এবারের জুলাই উন্মুক্ত। অপরাধী-হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পেতে শুরু করেছে। যারা তাদের আপনজনকে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিল সেসকল গণহত্যাকারীদের আইনানুযায়ী বিচার চাই।

আবুল হাসানাত বাবুল: লেখক, সম্পাদক; সাপ্তাহিক অভিবাদন, সভাপতি; তিননদী পরিষদ

সাবেক সভাপতি; কুমিল্লা প্রেসক্লাব।

লাইফ ইজ নট অ্যা ব্যাড অফ রোজেস!

জিপিএ ফাইভ এবং প্রজন্মের গন্তব্য!

কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে

সেকশন