হোম > মতামত

জিপিএ ফাইভ এবং প্রজন্মের গন্তব্য!

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস

আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১৮

দিন কয়েক আগে ১০ জুলাই ২০২৫ পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি এবং সমমানের সবচেয়ে বড় আয়োজনের প্রতিক্ষিত ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। যেখানটায় এবার উনিশ লাখের মতো শিক্ষার্থী দেশ বিদেশ থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এবারের ফলাফল ২০২৪ এর পাশের হারের চেয়ে ১৪.৯৫ শতাংশ কম।

এ বছর পাশের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ। এবং কাঙ্খিত জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। বিশ্লেষণে বলা যায় প্রতি ১০০ জনের সাতজন জিপিএ ফাইভ। বেশ বড় একটা অংশ অকৃতকার্য। ভাবতেই শিহরিত এবং মনটা খারাপ হয়ে যায়। জিপিএ ফাইভ ই কি সাফল্যের সবেধন নীলমণি। এখানটায় ভাবার বিষয়। আমরা কি বিপরীত দিকে হাঁটছি? প্রজন্মের মাঝে কি ভুলবার্তা দিচ্ছি না?

মানুষ সামাজিক জীব।যাপিত জীবনে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের মাঝেই মানবের আগামীর স্বার্থকতা, অথচ আমরা সবাই কিনা সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ার প্রয়োজনীয়তার চেয়ে বাহ্যিক ফলাফলের দিকেই ছুটছি বেশি!হারজিত থাকবেই এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং অহমিকাবোধের কি খুব বেশি দরকার আছে? অথচ এসবই আমাদের আহলাদীপনা এবং বিবেচনা বহির্ভূত আচরণ। যা শিশু পরিবার সবাইকে বিষিয়ে তুলছে। এবং স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথে কাটাঁ হয়ে বিঁধছে। রেজাল্ট হয়তো জাগতিক জীবনের পথ চলায় একটা মাত্র মানদন্ড কোনভাবেই তা একমাত্র মানদণ্ড নয়। অথচ এসব অসুস্থ ভাবনা আমাদের চারিপাশকে চাপ ও তাপে অস্থির করে তুলছে।

প্রজন্ম ভালো ফলাফল করছে, জিপিএ ফাইভ পেয়েছে সত্যিই ভালো খবর। এনিয়ে বাড়াবাড়ির কি কেন? আর ইদানিং নতুন উন্মাদনা সামাজিক মাধ্যমে নম্বর ফর্দসহ সচিত্র প্রচার। এসবের ফলে পারস্পরিক তুলনা, আমিত্ত্ববোধ প্রকট হয়ে যাচ্ছে। যা সমাজ সংসারে ভুলবার্তা দিচ্ছে। অথচ বড় একটা অংশ কটুকথা ও তাচ্ছিল্যের ফলে বিমর্ষ অস্থির হতাশাগ্রস্থ হয়ে চাপ সহ্য করতে না পেরে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা ও ঘটাচ্ছে। পরিবারের অবহেলা প্রতিবেশীর নাক সিটকানো অভিভাবকের মানহানি এসব প্রপঞ্চ প্রজন্মের মাঝে নেতিবাচক মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে।যা সমাজ সংস্কৃতি ও সভ্যতার জন্য উপাদেয় নয় বরং ক্ষতির কারণ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি রয়েছে।

জিপিএ ফাইভ কি জীবনের সব? সফল ব্যক্তিরা কি সবাই জিপিএ ফাইভধারী? বাকিরা কি সবাই অসফল? অবিভাবকেরা এসবের পিছু ছুটে শিশুর শৈশবকে ফ্যাকাসে করে তুলছে না ত? এবং নিজেরাও চাপ না নিতে পেরে শারীরিক মানসিক সামাজিকভাবে নিজেদের ক্ষতি করছে। অথচ যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের প্রতি সমানুভূতি প্রশংসা এবং ভালবাসার অভিযোজন ঘটিয়ে প্রজন্ম কে সাহস যোগানোর মাঝে ই সৌন্দর্য।

পরীক্ষায় সফলতায় কি জীবনের পরিপূর্ণতা? সুযোগ কি একেবারে ই শেষ? না,পরীক্ষা সব নয়। বিল গেটস থমাস আলভা এডিসন উইনস্টন চার্চিল গতানুগতিক ধারায় ব্যর্থ হয়ে ও জগৎবিখ্যাত।আইনস্টাইন স্লো লার্নার এবং চার্লস ডারউইন মাঝারি মানের তকমা পাওয়ার পরও তাদের কীর্তি স্মরণীয়। তাহলে কি জিপিএ ফাইভ ঘোড়ার রেসে সোনালী আগামী খোঁজা লাগবে? সময় এসেছে ভাবার।

ফলাফল জীবনে প্রয়োজন। তবে একমাত্র মানদণ্ড নয়। প্রজন্মের মাঝে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের বীজ বপন ব্যতীত ভালো মানুষ গড়ে তোলা কঠিন। পারস্পরিক তুলনা অহংবোধ আমিত্ব এসবের চাপে নিজে এবং প্রজন্মকে পিষ্ঠ করা উচিত হবে না। বরং চাপের বদলে ভালোবাসা এবং পাশে থাকার আশ্বাসের মাঝেই আগামীর সৌন্দর্য। চটকদার বাহারি প্রচার বড়ত্বের অস্থিরতা এবং প্রজন্মের মাঝে অসুস্থ মানসিকতার বিকাশ না ঘটিয়ে মমতা উৎসাহ এবং আমরা করবো জয় এসবের মাঝেই স্বপ্নীল আগামীর দেখা মিলবে। অভিভাবক এবং স্বজনদের বাড়তি উন্মাদনা এবং অহেতুক চাপ না নিয়ে স্বাভাবিকতার মাঝেই রসদ খোঁজতে হবে।

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস: অধ্যাপক , সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

জুলাই ডায়েরি

লাইফ ইজ নট অ্যা ব্যাড অফ রোজেস!

কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে

সেকশন